সোনারগাঁও টিভি,
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে এই দল। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই রচিত হয়েছে পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে, টানা ৭২ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রাম, সৃষ্টি, অর্জন ও উন্নয়নের ইতিহাস। ২০২১ সালের ২৩ জুন,
দলটির ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী ও ৭৩তম জন্মদিন। এই দীর্ঘ সময়ে নানা উত্থান-পতন, সংঘাত ও সম্মিলনের মধ্য দিয়ে দলটি বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই দল প্রতিষ্ঠার সময় তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পান। প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা হিসেবে, শুরু থেকেই দেশজুড়ে নেতাকর্মীদের আস্থার প্রতীকে পরিণত হন তিনি, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র কাণ্ডারী হয়ে ওঠেন দ্রুততম সময়ে। পরবর্তীতে দলের সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ হয়ে গেলে বঙ্গবন্ধুই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন শুরু করেন। সেই ভার থেকে আর কখনোই মুক্ত হতে পারেননি। আমৃত্যু দেশসেবার কাজে ব্রত ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে যেমন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের হাতে তৈরি, তেমনি আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের কারণেই আমরা পেয়েছি।
বঙ্গবন্ধু যে দলের ভিত্তি দিয়েছেন, সেই দলকে এখনো বহন করে চলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। একাধিকবার ঘাতকের বুলেট-বোমার সামনে নিজের জীবনকে বিপন্ন করতে হয়েছে, তবুও দলের রক্ষাকবচ হয়ে থেকেছেন তিনি। একারণেই বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি আবেগের নাম। এই দলের সব সদস্য মিলে একটি পরিবার। এ পরিবারই বাংলাদেশের বৃহত্তর পরিবার। দলটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা-কর্মীদের মধ্যে আজ অনেকেই জীবিত নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ আছে এবং শুধু তাই নয়, এখনো দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ৫০ বছরের বাংলাদেশের সাড়ে ২৩ বছর দেশশাসন করার সুযোগ পেয়েছে দলটি। এই সাড়ে ২৩ বছর আওয়ামী আমলের মধ্যে, ২০ বছরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জন্মকথা
১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়। এরপরেই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হনে পাকিস্তানিরা। কিন্তু তাদের অপচেষ্টা রুখে দিতে শুরু থেকেই মাঠে নামেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। দেশভাগের আগে, প্রভাবশালী ছাত্রনেতা হিসেবে পুরো ভারতবর্ষ চষে বেড়িয়েছেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঢাকায় ছাত্রলীগ নামের একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরপরের বছরেই গঠিত হয় আওয়ামী লীগ। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে সেসময় তাকে জেলে বন্দি করে রেখেছিল পাকিস্তানি জান্তারা। আওয়ামী লীগ গঠনের ব্যাপারে দলের সিনিয়র নেতারা তার মতামত নেওয়ার জন্য জেলেও বার্তাবাহক পাঠান। তিনি নিজে সরাসরি ছাত্র সংগঠন না করে, মূল দরে থাকার ব্যাপারে মত দেন। এরপর ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন বিকালে ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে এই দলের নাম পরিবর্তন হয়ে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তৎকালীন পূর্ব বাংলার সমস্ত জেলায় দলের কমিটি গঠন করায় তৎপর হন এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন।
কিন্তু ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে যেতে হয়। সে সময়ে, ৩০ মে ১৯৫৪ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫৪ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ২০৬ দিন কারাভোগ করেন। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর, আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিব দলের নাম থেকে ‘মুসলিম' শব্দটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করলে, আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় কাগমারিতে এবং একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল সাংস্কৃতিক সম্মেলন। একই বছর ৩০ মে দলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, একই ব্যক্তি একসঙ্গে সরকার ও সংগঠনের দুটো পদে থাকতে পারবেন না। শেখ মুজিব দলকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির পর, বঙ্গবন্ধু ১১ অক্টোবর গ্রেফতার হন। এ সময়ে টানা ১ হাজার ১৫৩ দিন তাকে কারাগারে কাটাতে হয়, ৮ ডিসেম্বর ১৯৬১ পর্যন্ত। সামরিক জান্তাদের কারণে দেশে মূলত রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন বঙ্গবন্ধু। ওই সভায় দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি এবং সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় সম্বলিত প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ছয় দফা উপস্থাপনের বছর, ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে, বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভ করে বাঙালি জাতি।
Post a Comment