সোনারগাঁও টিভি,
১৯৬৬ সালের ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের এক জনসভায় ৭ জুন হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জুন মাসব্যাপী ৬-দফা প্রচারে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়।
৭ জুন তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল বেভারেজের শ্রমিক সিলেটের মনু মিয়া গুলিতে প্রাণ হারান। এতে বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
তেজগাঁওয়ের ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আজাদ এনামেল অ্যালুমিনিয়াম কারখানার শ্রমিক আবুল হোসেন ইপিআর-এর গুলিতে শহীদ হন।
একইদিন নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের কাছে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ৬ জন শ্রমিক। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়।
হাজার হাজার আন্দোলনকারী মানুষ গ্রেফতার হন। বহু জায়গায় বিক্ষুব্ধ জনতা গ্রেফতারকৃতদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ৬-দফা ভিত্তিক আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শহীদের রক্তে আন্দোলনের নতুন মাত্রা গড়ে ওঠে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্দোলন।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধীদলসমূহের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৬-দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিচালিত ৬-দফা আন্দোলনই ছিল সে সময়ে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার কেন্দ্র বিন্দু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম গৌরবময় অধ্যায় হলো ৬-দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব। এই ৬ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ১৯৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান, ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা বাঙালির বিপুল বিজয় এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বের স্বাধীন মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।
৬ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু’তে রূপান্তরিত হন।
৬-দফার পক্ষে জনমত সংগঠিত করার লক্ষে সারা বাংলায় গণসংযোগ শুরু করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় তাঁকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বার বার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৬-এর প্রথম তিন মাসে তিনি আটবার গ্রেফতার হন।
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথম অভিযুক্ত করে মোট ৩৫ জন রাজনীতিক, বাঙালি সেনা ও উচ্চপদস্থ বেসামরিক অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।
১৯৬৯ সালে ৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের ৬-দফাসহ ছাত্রদের ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং ওই পরিষদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলে।
অবশেষে গণমানুষের অব্যাহত চাপের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ২২ ফেরুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
প্রতিবারের মতো এবারও ৬ দফা দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
Post a Comment